খরচ, নাগাল আর গুণমানের ত্রিকোণ
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নিয়ে একটি ত্রিকোন আঁকা যাক। ত্রিকোণের এক দিকে থাকুক, চিকিৎসার নাগাল পাওয়া গেল কি না বা কত সহজে নাগাল পাওয়া গেল; এক কোণে থাক, গুণমানের ব্যাপারটা; আরেক কোণে থাকুক চিকিৎসার খরচ। গুণমানের বিচার খরচ বা নাগাল পাবার থেকে পৃথক করে দেখলে হবে না। কারণ মনে করুন অত্যন্ত উৎকৃষ্ট, বিশ্বমানের হাসপাতাল রয়েছে, চিকিৎসার খরচা যৎসামান্য কি কি নিখরচায় দেয়া হয়, অথচ সেখানে পৌঁছবার যো টি নেই, আপনি নাগালই পাবেন না; হয় যেতে পারবেন না, নয় এত লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করে থাকতে হবে যে, সে না যাবারই সমান। তাতে করে কার কি লাভ। আবার ধরুণ ভারি উৎকৃষ্ট চিকিৎসাকেন্দ্র, নাগাল পাওয়াও সহজ, কিন্তু অসম্ভব খরচসাপেক্ষ, তাতেও হবে না।
এক্ষেত্রে খরচের ব্যাপারটি শুধু টাকা পয়সার হিসেব করে দেখলে চলবে না, সময়ের ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হবে। ধরুন একজন মানুষ গ্রামে থাকেন; তিনি শহরে সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে ডাক্তার দেখাবেন। তাঁকে গ্রাম থেকে খুব সকালে বেরিয়ে ট্রেন ধরে শহরে আসতে হবে; আউটডোরে ডাক্তার দেখানোর খরচা হয়ত তাঁর বেশী পড়ল না, কিন্তু তাতে তাঁর অনেকটা সময় চলে গেল, তার ওপর সারা সকাল অপেক্ষা করার পর ডাক্তার বাবুর সঙ্গে তাঁর হয়ত বড়জোর পাঁচ কি দশ মিনিটের সাক্ষাৎ হল। এখানে তাঁর খরচ শুধু অর্থের মাপে দেখলে চলবে না, কতটা সময় তিনি ব্যয় করলেন ও তার বিনিময়ে কি ধরণের পরিষেবা তিনি পেলেন, তাও বিচার করে দেখতে হবে। ধরুণ কারোর প্লাস্টিক সার্জারী করতে হবে, ডাক্তারবাবু তাঁকে বহু টাকার বিল ধরালেন, এবং বহু দিন ধরে চিকিৎসা চলবে। এখানে আবার সময় ও অর্থ, দুটিই বিবেচনা করে দেখতে হবে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার খরচ ও নাগাল নিয়ে যা গবেষণা এযাবৎ হয়েছে তাতে মোটামুটি মনে করা হয় যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নাগাল পাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক মানুষের প্রয়োজন \cite{andersen2014improving}। সেই প্রয়োজন কিছুটা মানুষ নিজে স্থির করে (কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে), কখনো কখনো ডাক্তার বা চিকিৎসা পরিষেবা যিনি দেন তিনি স্থির করে দেন (যেমন ধরুন টীকাকরণ করার জন্য হেলথ সেনটারে নিয়ে যাবার দরকার)। নাগাল ও খরচ বাদ দিলে আরেকটা বড় ব্যাপার বিবেচনা করে দেখতে হবে। বিশেষ করে যে বিষয়টি নিয়ে এই লেখা, সেটি হল, চিকিৎসা পরিষেবার গুণমান । গুণমানের মাপযোকটা বেশ জটিল, তার কিছুটা ব্যাপার অবশ্য আগেই লেখা হয়েছে।